অনেকেই
প্রশ্ন করেন কি করে মোটা কমাই।অনেকে অনেক কথা বলেন, বাজারে অনেক ডায়েট চার্ট আছে। কেউ
বলে এই খাবার খাবেন না, কেউ বলে কার্বোহাইড্রেট কম খাবেন, কেউ বলে ফ্যাট টোটালি
খাবেন না।অনেকে বলে যা খাবেন, তা বার্ন করবেন।চাইলেই ঘড়ির কাঁটায় সব হয় না
লোকের।জীবন তো মিলিটারির পিটি প্যারেড নয়।কোনটা
সাময়িক উপকারী, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি।কোনটা একজনের জন্যে ওয়ার্ক আউট হয়, আরেকজনের
জন্যে যে লাউ, সেই কদু থেকে যায়।কোনটা শুরু করে উপকার পেয়ে থামিয়ে দিল একদিকে
আগের চেয়ে দ্বিগুণ মোটা হয়ে যায়, আরেকদিকে বেশিদিন মানলে শরীরের তেরোটা বাজিয়ে
দেয় কিছুদিন পরে।সব
মিলে কোনো ডায়েট চার্ট সার্বজনীন নয়।একটি কারো শরীরের জন্যে হিরো হলে আরেকজনের
জন্যে জিরো।সবসময়
ব্যালেন্সড ডায়েট বেস্ট।ঝুঁকি নেই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সময়ে উপকার পাওয়া যায়।
সাথে একটিভ লাইফ, পরিশ্রম, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম।একটা
সহজ পথ বলি।সহজ এবং বেস্ট ডায়েট।এটাকে
বলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং।চিকিৎসকরা এটি অ্যাপ্রুভ করেন।কারণ গবেষণায় স্বীকৃত। এটা
শরীরের কোনো ক্ষতি না করা ডায়েট।বেশিরভাগ ডায়েট খাবারের উপর ভিত্তি করে।কি
খাবেন, কি খাবেন না, সাথে কি করবেন, কি করবেন না। কিন্তু ইন্টারমিটেন্ট ফাষ্টিং
খাবারের উপর নয়, এমনকি কি করবেন খাবারের পর, সেটার উপরেও নয়।এটা খাবার খাওয়ার
সময়ের উপর ভিত্তি করে। কয়েক ধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং আছে।সবচেয়ে কার্যকরী
দুটো।
১) এটাকে বলে ১৬/৮।পুরো ২৪ ঘণ্টা দুটো ভাগে ভাগ করা।১৬ ঘণ্টা এবং ৮ ঘণ্টা । মাত্র ৮
ঘণ্টা খাবেন, বাকি ১৬ ঘণ্টা খাবেন না।সচরাচর লোকে ১৬ ঘণ্টা খায়, ৮ ঘণ্টা ঘুমায়
বলে সে ৮ ঘণ্টা উপোস থাকে।তো কি করে এটা করবেন দৈনন্দিন কাজে কোনো ক্ষতি না করে।সহজ
উপায় সকালের ব্রেকফাস্ট বাদ দেয়া।ঘুম থেকে উঠে শুধু গ্রিন টি পান করেন অথবা শুধু
পানি খান, অন্য কোনো খাবার নয়।দিনের প্রথম খাবার খাবেন দুপুর ১২ টায়।দ্বিতীয়
খাবার খাবেন বিকেল ৪ টায়, রাতের এবং শেষ খাবার খাবেন রাত ৮ টায়।দুপুর ১২ থেকে
রাত ৮ টা, তিন বেলাই খেলেন, কিন্তু মাত্র ৮ ঘণ্টায় খেলেন, প্রতিটি খাবারের ব্রেক
৪ ঘণ্টা।রাত ৮ টা থেকে পরদিন দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কিছু খাবেন না।তাহলে উপোস থাকলেন
১৬ ঘণ্টা।এটা যেনো অনেকটা গরমকালে প্রতিদিন রোজা রাখা।এমন
উপায়টিতে আশা করবেন না তিনমাসেই আপনি ঐশ্বরিয়া রায় কিংবা টম ক্রুজ হয়ে যাবেন।এটি
ধীরে ধীরে আপনার শরীর শেইপ করবে, শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান ঠিক রাখবে এবং শরীরকে
অভ্যস্ত করে তুলবে।শরীরে বাড়তি ক্যালরি বেশি জমে রাতে, যখন শরীর একটিভ থাকে না।১৬
ঘণ্টা খেয়ে মাত্র ৮ ঘণ্টা বিশ্রামে শরীরে বার্ন আউট হয় না।কিন্তু সে ১৬ ঘণ্টা
আপনি জেগে থাকলেন সকাল ৬ থেকে রাত ১০ টা, তার মাত্র ৮ ঘণ্টা খেলেন, দিনের বাকি ৮
ঘণ্টা এবং রাতের ৮ ঘণ্টা আপনি আসলে উপোস থাকলেন।কিন্তু খাবার তিন বেলাই খেলেন।দৈনন্দিন
সময়সূচি এবং কাজের কোনো ক্ষতি হলো না, এতসব খাবার বাছতে হবে না।বিজ্ঞানী এবং
চিকিৎসকদের গবেষণায় দেখা গেছে এটি শরীরের কোনো ক্ষতি না করে ওজন কমাতে দারুণ
সাহায্য করে।অনেকের
জন্যে হয়তো এটি কষ্ট দায়ক।সকালের ব্রেকফাস্ট খেতে পারবে না, এটি শুনলে আগের
রাতেই অনেকের ঘুম আসবে না।যদিও প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও ১৬/৮ ইন্টারমিটেন্ট
ফস্টিং কিছুদিন পর সয়ে যায়, তখন সকালের নাস্তা না করলেও ক্ষুধা লাগে না।
২)যাদের জন্যে ১৬/৮ কষ্টকর তাদের জন্যে এই ডায়েট।এটি ১২/১২।দিনের ১২ ঘণ্টা খাবেন,
কাজ করবেন।রাতের ১২ ঘণ্টা কিছুই খাবেন না।সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত
খাবেন । সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে পরদিন সকাল ৬ টা পর্যন্ত উপোস থাকবেন।সকালের নাস্তা
ভোর ৬ টায় করুন, দুপুর ১২ টায় লাঞ্চ করুন, সন্ধ্যা ৬ টায় ডিনার করুন।সন্ধ্যা ৬
টার পর কিছু খাবেন না।রাত ১০ টায় ঘুমিয়ে পড়ুন।যেটা
যাকে সয়, পরীক্ষা করে দেখুন, কাজে লাগবে।অভ্যাস করে ফেলুন, সহজ মনে হবে।এত সব
ডায়েটের চার্ট কিছুদিন মেনে শরীরের বারোটা বাজাবেন না।বরং খাবার গ্রহণ এবং
বিশ্রামের একটি নিয়ম অভ্যাসে পরিণত করলে শরীর ঠিকমতো চলবে, পুষ্টির কোনো ঘাটতি
হবে না, মেদ ভুঁড়ি জমবে না।সাথে ব্যালেন্সড ডায়েট, ব্যায়াম, একটিভ লাইফ এবং
পর্যাপ্ত ঘুম ঘুমান।
0 মন্তব্যসমূহ