বর্তমানে অতিরিক্ত কম ওজন বা বাড়তি ওজনের কারণে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।আর এ জন্য দরকার একটি যথাযথ গর্ভকালীন ডায়েট চার্ট।গর্ভধারণের সময়কে মূলত তিনটি ত্রৈমাসিকে ভাগ করা হয়েছে যেখানে ০ থেকে ১৩ সপ্তাহকে বলা হয় ১ম ত্রৈমাসিক,১৪ থেকে ২৬ সপ্তাহ সময়কে বলা হয় ২য় ত্রৈমাসিক এবং সবশেষে ২৭ থেকে ৪০ সপ্তাহ সময়কে বলা হয় শেষ অর্থাৎ ৩য় ত্রৈমাসিক।প্রথম ত্রৈমাসিকে খাবারের পরিমাণে ক্যালরির পরিমাণ পরিবর্তন না হলেও পরবর্তী দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতিদিন অন্তত অতিরিক্ত ৩০০ ক্যালরি ও ৪৫০ ক্যালরির করে বাড়তি খাবার গ্রহণ করতে হবে।
খাবারের তালিকাঃ
ঘুম থেকে উঠেঃ
সকালে
ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানির সঙ্গে রাতে ভিজিয়ে রাখা চার থেকে পাঁচটি কাঠবাদাম
খেতে হবে।বাদামে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফলিক অ্যাসিড,ভিটামিন ডি ও জিংক
যা ভ্রূণের মস্তিষ্ক, শিশুর হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ুবিক বিকাশে সাহায্য করে।
সকালের খাবারঃ
সকালের
নাস্তায় পরিমাণমতো ভাত, রুটি বা ওটসের সাথে অবশ্যই আমিষ জাতীয় খাবার যেমন মসুরের
ডাল, মাছ বা মাংস রাখতে হবে।মসুরের ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফোলেট যা বাচ্চার
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় এবং জন্মকালীন ঝুঁকি কমায়।
মিড মর্নিং নাস্তাঃ
একসাথে
বেশি খাবার না খেয়ে গর্ভকালীন ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হলে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
মিড মর্নিং নাস্তা হিসেবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সিদ্ধ ডিম ও
খেজুর। ডিমের কুসুমে রয়েছে কোলিন যা গর্ভের সন্তানের মেধা বাড়ায় ও পাশাপাশি এতে
বিদ্যমান প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ডি, বি১২, বি২ এবং প্রয়োজনীয় মিনারেল
থাকে যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক বিকাশে সাহায্য করে।এটি শিশুকে
স্পাইনা বিফিডা এবং অ্যানেনসেফালির মতো রোগে আক্রান্ত হতে বাধা দেয়। পাশাপাশি
খেজুরে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতা রোধে সাহায্য করে।
দুপুরের খাবারঃ
একজন
গর্ভবতী মাকে দুপুরের খাবারে ভাতের পাশাপাশি খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ বা লাল মাংস ও
প্রচুর শাকসবজি।সামুদ্রিক মাছে রয়েছে আয়েডিন এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যেমন ওমেগা
৩ ও ৬ যা বাচ্চার ব্রেইনের উন্নতি সাধন করে। লাল মাংস অর্থাৎ গরুর মাংস ও দেশি
মুরগির মাংসে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা রক্তস্বল্পতার রোধে পাশাপাশি বাচ্চার সুষম গঠনে
উন্নতি সাধন করে। তবে এ আয়রন শোষণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পাশাপাশি উচ্চ ভিটামিন সি
যুক্ত খাবার যেমন আমলকি,কমলা বা লেবু খেতে হবে।
বিকালের স্বাস্থ্যকর
নাস্তাঃ
গর্ভকালীন
ডায়েট চার্ট মেনে চলার সময় ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা চাই।তাই তৈলাক্ত নাস্তার পরিবর্তে
খেতে হবে ক্যালরিবহুল স্বাস্থ্যকর নাস্তা।এসময় খাবারের তালিকায় রাখা যায় চিকেন সুপ,
দুধ ও বাদাম/পপকর্ন, মিক্স ফল বা ছোলা-মুড়ি, সালাদের যেকোনো একটি। দুধ গর্ভবতী
মায়েদের জন্য একটি উত্তম খাবার কারণ দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’ ও ‘ই’ পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় অন্যান্য মিনারেল যা শিশুর দাঁত, হাড়,নখ ও চুলের গঠনেও
সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম শোষণেও ভিটামিন-ডি লাগে যা পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
রাতের খাবারঃ
রাতে
শর্করাযুক্ত খাবারের পরিমাণ সামান্য কমিয়ে আমিষ জাতীয় খাবার যেমন মসুরের ডাল, ডিম,
সামুদ্রিক মাছ বা মাংস বেশি খেতে হবে। পাশাপাশি সবজি বা সালাদ রাখতে হবে রাতের
খাবারে। তবে গর্ভবতী মায়েদের এসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধে রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই
ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলতে হবে।
গর্ভকালীন যেসব খাওয়া যাবে নাঃ
১)অতিরিক্ত
পরিমাণ ক্যালরিবহুল শর্করাযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি খাবার, ফাস্টফুড, পানীয়, তেলের
পিঠা খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলো গর্ভবতী মায়েদের ওজন ও রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
২)চা-কফি
অর্থাৎ ক্যাফেইন যুক্ত খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয় যার ফলে মা এবং শিশুর উভয়ের
পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
৩)কামরাঙ্গা,
আনারস বা কাঁচা পেঁপেতে কিছু এনজাইম থাকে যা ১ম ত্রৈমাসিকে ভ্রূণের ক্ষতি করতে
পারে।
৪)অতিরিক্ত
লবণাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি পায়ে পানি
আসা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যেতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ